সেলফি বিলাস

Drawing: Shruti sen

তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় একি মোর অপরাধ !! ফেসবুক খুলে হা করে দেখছি তো দেখছি ,শেষ করে উঠতে পারছিনা । কত রকমের ফটো !  নিখুঁত সুন্দর  ছবি ও যেমন আছে,তেমনি বিচিত্র ভঙ্গিমায় ,বিচিত্র মুখাবয়বে ছবি নয়তো বা  আনাড়ি হাতে ক্যামেরা বন্দী ফটো যা কোনোভাবেই এ্যালবামে স্থান পাবার যোগ্য  নয় তেমন ছবি  ও । তবে মানতে হচ্ছে, ফেসবুকীয় সেলফি যুগে সুন্দর করে সেজেগুজে  যতক্ষণ পর্যন্ত না সবাইকে দেখানো যাচ্ছে মনে শান্তি নেই।

কিন্তু একবার তুললেই তো আর ঠিক হয় না এ যে বার বার তুলতে হয়।সে খেতে খেতেই বলুন বা বাজার করতে গিয়ে বলুন বা একান্ত  ঘরোয়া মুহূর্ত  বলুন  সেই ছবি তুলে তক্ষুনি সবাই কে জানাতে হবে বইকি! এই যে “সবাই” টা কিন্তু আমার ঘরের মানুষজন নয়!  আমার সেই পরিচিত / অপরিচিত মানুষজন যাদের সঙ্গে আমার অদেখার সম্পর্ক ।যারা আছে ,কিন্তু নেই! অদৃশ্য মানব মানবী হলেও এদের মতামতের মুল্য অনেক! অন্তত ধরা ছোঁওয়ার মধ্যে থাকার মানুষের থেকে তো নির্ঘাত বেশি!! আমায় কোন angle থেকে অপ্সরার কাছাকাছি লাগে সে তো আমি জানি ,তাই আমিই তুলব আমার ফটো , হ্যাপা ও কম। কাউকে অনুরোধ ও  করতে হবে না । একটু আধুনিক হতে চাইলে  ছুচোঁর মত ওষ্ঠ  করতে হবে। ব্যাস, টপাটপ আপলোড  করার কথা ভুললে চলবে না ! “সবাই” অপেক্ষারত ! আমি   কোথায়, কখন  কি করছি আলবৎ সবাই কে জানাতেই হবে !  আমার latest status  যেমন দেব , অন্যের খবর ও আমার চাই । আমায় কজন ” like ” দেয় আর আমার কতজন ছায়া বন্ধু আমায় অনুসরণ করে এই  যে দুর্লভ  কৃতিত্ব  আমি অর্জন করেছি সে কি  কম না কি! আমি  ঠিক কতটা জনপ্রিয়, কতটা ভাল  আর কতটা সুন্দর বা সুন্দরী সেটা জানতে হলে তো  আমাকে এই সেলফি টা রপ্ত করতেই হবে। আর দিয়েই যেতে হবে একের পর এক “শিল্প” কর্ম ! নাহ! এই পাগলামী তে  আমি তুমি,সে, তাহারা, দাদু , দিদা,নাতি নাতনি,  মা বাপ ,দিদিমনি, ছেলে মেয়ে, ডাক্তার বদ্যি  কেউ বাদ নাই।

এই নিজেকে নিয়ে চুড়ান্ত  অবসেশন বা আচ্ছন্নতা  দেখে  কতগুলো প্রশ্ন মনের মধ্যে যে উঁকি দেয় না তাই বা কি করে বলি। এই অবসেশন  কোনো অশনির সঙ্কেত নয় তো? একেই তো আমরা দিন  দিন  সম্পর্কের ডানা ছাঁটতে ছাঁটতে একা । তার ওপর আবার নিজেকে নিয়ে চুড়ান্ত  উন্মাদনা । এই  “আমি আমি” খেলা  যদি পছন্দসই সমর্থন না পায় তাহলে তো আরও  মুস্কিল ।  আমরা কি ক্রমশ  নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছি? কেনই বা আমরা  আমাদের প্রত্যেক টা ব্যক্তিগত পরিসর কে হাট করে  হাজার লোকের মাঝে  বে -আব্রু করে দিচ্ছি ? ছায়া বন্ধুদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া মানে  আপনি  আরও সেলফি দিতে উৎসাহিত বোধ করবেন। আর নেতিবাচক হলে আরো কিছু অশান্তির আগমন সুনিশ্চিত। প্রথম কোপটা পড়বে গিয়ে সেলফোনের ওপর ।এই টা তো পুরনো হয়ে গেছে, ক্যামেরাটা ঠিক কাজ করে না ! ক্রয় ক্ষমতা থাকলে কিনুন আরেকটা নয় তো ঘ্যান ঘ্যান করে আরেকটা আদায় করুন । তারপর জগত সংসারের সমস্ত কাজ শিকেয় তুলে ছবি তুলুন আর পোস্ট করুন । আর যারা আপনার এই সেলফি বিলাসে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না তাদের  মত প্রাচীনপন্থী কে খবরদার ভুলেও বন্ধু ভাববেন না !!

কিছুদিন আগে একটা  ভুয়ো খবরে ছেয়ে গিয়েছিল ইন্টারনেটে  , যে সেলফি র নেশা  মানসিক বৈকল্যর লক্ষণ !! যাদের  মধ্যে আত্ম মর্যাদার অভাব  আর  সম্পরকের ঘাটতি রয়েছে তারাই সেই অভাব পুরণ করতে  নাকি এই সেলফির নেশায় বুঁদ হচ্ছে।  অতটা  ভয়ানক পরিস্থিতি  না হলেও , গবেষণা কিন্তু থেমে নেই । Narcissism  বা আত্মমুগ্ধতার  সঙ্গে এর  একটা যোগসূত্র  কে একদম উড়িয়ে দিচ্ছেন না  গবেষকরা । তবে হ্যাঁ, যারা  একটু বেশি আত্মমুগ্ধ তারা সেলফির মাধ্যমে  নিজের প্রচার  ভালই  করে নিতে পারেন, একটু আত্ম সন্তুষ্টি পাওয়া  এই আর কি ! তাতে কার কি এল আর গেল !কিন্তু একেবারে যে গেল  না তাও বোধকরি হলফ করে বলা যাচ্ছেনা ।   social media তে মানবচরিত্র র নতুন দিক  বা  dimension  বা নতুন সমীকরণ  নিয়ে মনস্তত্ববিদরা যে  রীতিমত ভাবছেন  তা  গবেষনা গুলোই  বলে দিচ্ছে।

তাহলে শেষমেশ কি দাঁড়ালো ? যত নষ্টের গোঁড়া ওই ফেসবুক  বা অন্য social media? না কক্ষনও না। প্রযুক্তির দোষ দেয়া তো সবচাইতে সহজ । বা অন্য কারো ঘাড়ে দোষ চাপানো। প্রযুক্তি তো দিন দিন আধুনিক থেকে আধুনিকতর হবে। আমাদের সুবিধার্থে সৃষ্ট  প্রযুক্তি কি  আমাদের হার মানিয়ে দেবে? একথা সত্যি যে  দিন দিন ই আমাদের পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে  যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্যে। আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা cyber crime এর দৌলতে। জটিলতা  বাড়ছে বই কমছে না ।জটিলতার নতুন বিন্যাস মানব মনেও। কোথাকার জল কথায় গিয়ে গড়াবে একমাত্র ভবিষ্যৎ ই বলবে।  ততখন না হয় প্রযুক্তির পিঠেই আমরা চড়ি , প্রযুক্তি কে আমাদের ঘাড়ে চাপতে  না দিলেই হল ।

2 Comments Add yours

  1. jayatisblog says:

    শ্রুতি কে বললাম, ভীষণ খুশি হল। আরো ভাল আঁকার উৎসাহ পাবে । 🙂 thanks again 🙂

    Like

  2. pore bhalo laglo.
    Minimilistic chobi ta bhishon expressive

    Like

Leave a comment